সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কৃষকেরা রোপা আমন ধানের আবাদ শুরু করেছেন। বিভিন্ন এলাকার উচু মাঠগুলোয় কৃষকেরা এর আবাদে নানা জাতের ধান চারা লাগাচ্ছেন। উপজেলা সদরের কাওয়াকসহ আর কটি এলাকায় রোপা আমন ধানের চারা কেনাবেচা হচ্ছে। এক পণ (৮০ মুঠো) চারা দুই থেকে আড়াইশো টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
এবারে কৃষি প্রণোদনায় ১ হাজার ৪০০ জন কৃষককে বিনামূল্যে রোপা আমন ধান বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছে। রোপা আমন ধানের ৩২ রকম জাত আছে বলে কৃষি অফিসের তথ্যে জানা গেছে। এর মধ্যে নানা নামে উফসি ২৭ জাত ও হাইব্রিড ৫ জাত আছে।
উল্লাপাড়া কৃষি অফিস থেকে জানানো হয়, উপজেলায় এবারের মৌসুমে ১১ হাজার ৫০৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদের সরকারী লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উপজেলার সলঙ্গা, রামকৃষ্ণপুর, হাটিকুমরুল, সলপ, পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে কৃষকেরা রোপা আমন ধানের আবাদ শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে ৫ হাজার ৪৫৫ হেক্টরে রোপা আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। কৃষকেরা জমিতে বেশী হারে ফলন মেলে এমন নানা জাতের রোপা আমন ধানের চারা লাগাচ্ছেন। কৃষি অফিস থেকে আরো জানা গেছে বিভিন্ন মাঠে ৫ হাজার ১৩০ হেক্টরে উফসি রোপা আমন ধানের চারা কৃষকেরা লাগিয়েছেন। এর মধ্যে ব্রি ধান ৭৫ জাত ১ হাজার ৫৫০ হেক্টরে, ব্রি ধান ৮৭ জাত ৯৫০ হেক্টরে, ব্রি ধান ৩৯ জাত ৮৫০ হেক্টরে, ব্রি ধান ৪৯ জাত ৬৫০ হেক্টরে, ব্রি ধান ৩২ জাত ১৫০ হেক্টরে, বি আর ২২ জাত ২৫০ হেক্টরে আবাদ করা হয়েছে। আর হাইব্রিড জাত ৩২৫ হেক্টরে আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে এজেড ৭০০৩ জাত ১৩৫ হেক্টরে আবাদ করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলা সদরের কাওয়াক মোড়ে গিয়ে দেখা গেছে রোপা আমন ধান চারা কেনাবেচা হচ্ছে। ক’জন ব্যবসায়ী রোপা আমন ধান চারা উত্তরের বিভিন্ন মোকাম থেকে এনেছেন। এর মধ্যে কৃষকদের চাহিদায় স্বর্ণা জাতের ধান চারা বেশী এনেছেন। ব্যবসায়ী মো. চান মিয়া বলেন বগুড়ার ধনুট ও সলঙ্গা এলাকা থেকে চারা কিনে এনে তারা এখানে বেচছেন। উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা জমিতে ধান চারা লাগাতে তাদের কাছ থেকে ধান চারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এক পণ চারা দুই থেকে আড়াইশো টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে।
উল্লাপাড়ার পুব অঞ্চলের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, নিজের সোয়া বিঘা জমিতে আবাদ রোপা আমন ধানের আবাদে স্বর্ণা জাতের ধান চারা কিনেছেন। নাগরৌহা গ্রামের কৃষক আঃ কুদ্দুস সলঙ্গা বাজার থেকে স্বর্ণা ৫ জাতের ধান চারা তিনশো টাকা দরে কিনে নিজের ৪৫ শতক জমিতে লাগিয়েছেন। নাগরৌহা গ্রামের কৃষক করিম মিয়া প্রতিবেদককে বলেন প্রায় দেড় বিঘা জমিতে বেশী হারে ফলনশীল ব্রি ধান ৩৯ জাতের রোপা আমন ধানের বীজতলা নিজেই করেছেন। সে চারা লাগাবেন সে জমিগুলোয় হালচাষ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সূবর্ণা ইয়াসমিন সূমী বলেন তার বিভাগ থেকে কৃষি প্রণোদনায় ১ হাজার ৪০০ জন প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে রোপা আমন ধান বীজ ও রাসায়নিক সার দেওয়া হয়েছিলো। প্রতিজন কৃষককে ৫ কেজি করে ধান বীজ , ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি দেওয়া হয়। প্রণোদনায় ধান বীজ পাওয়া ছাড়াও অনেক কৃষক নিজেরা কিনে বীজতলা করেছেন।
সেসব বীজতলার চারা লাগানো হচ্ছে। আর যাদের নিজস্ব বীজতলা নেই তারা চারা কিনে জমিতে লাগাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন উল্লাপাড়ায় এবারের মৌসুমে সরকারী লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হবে।
ঝর্ণা আক্তার/ আজকের সিরাজগঞ্জ