তাড়াশ প্রতিনিধি:
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে তালম ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা বাস্তবায়িত প্রকল্পে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোঃ গোলাম মোস্তফা ও মোঃ নাজির উদ্দিন মহুরী যৌথ স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রটি সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রেরণ করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তালম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল খালেক ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ও কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) সংস্কার কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত প্রকল্পে নাম মাত্র কাজ না করে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক কোনো কোনো প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টিআরের অর্থের পুরোটা আবার কোনো প্রকল্পে মাত্র ২০ থেকে ৩০ ভাগ কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাত করা হয়েছে। আবার একই জায়গায় বার বার প্রকল্প দিয়ে অভিনব কায়দায় অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। আর ওই সমস্ত প্রকল্পের কাজ না করেও কাগজে-কলমে শতভাগ কাজ দেখানো হয়েছে।
অপর দিকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দকৃত অর্থ পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ভাবে বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে শুধু কাগজে-কলমে। চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক ২০২২ -২০২৩ অর্থ বছরের টিআর/কাবিখা সাধারণ কর্মসুচির আওতায় তালম ইউনিয়নের গোন্তা দক্ষিণ পাড়া আব্দুস ছালামের পুকুর পাড় হইতে গুল্টা পাকা রাস্তা পর্যন্ত ইটের সলিং রাস্তা নির্মান প্রকল্পে স্বারক- ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.০০.০২.২২.৩১০(৮) তারিখ – ২৮/০৮/২০২২ পত্রে ৩,৫৮০০০/= টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। রাস্তা সলিংয়ের কাজ কিছুটা হলেও ওই রাস্তায় একই তারিখে আবারও ২৮/০৮/২০২২ তারিখের পত্রে ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.০০৪.২২.৩১১(৮) স্বারকে রাস্তায় ইটের সলিং নির্মানে ৩.১৫০ মেঃ টন চাউল (টিআর) বরাদ্দ দেওয়া হয়।
একই স্বারকে তালম শিবপাড়া আশ্রয়ন প্রকল্পে মাটি ভরাট কাজে ৪,৭৬,০০০/= টাকা এবং চককলামুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে আমজাদের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মান ও খেলার মাঠে দক্ষিণ পাশে মাটি ভরাট কাজে ৩.১৫০ মেঃটন গম বরাদ্দ দিলেও কোন কাজ হয়নি। রোকনপুর কবরস্থানের রাস্তা নির্মানে ৮.৫০০ মেঃ টন গম বরাদ্দ দেওয়া হলেও সেখানে কোন কাজ হয়নি।
অপর দিকে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামত (টিআর) সাধারণ কর্মসুচির আওতায় স্বারক ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.০০০৭.২৩-২৩১, তারিখ ২০/০৮/২০২৩ পত্রে দুইটি প্রকল্প বড়ইচড়া মাদ্রাসার গেট নির্মান বরাদ্দ ২,৮১,৬৬৯/= টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। অর্থ বছর শেষে সবে মাত্র কাজ শুরু করা হয়েছে। এবং তালম ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র ক্রয় বাবদ ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কোন আসবাবপত্র ক্রয় না করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
একই অর্থ বছরে স্বারক ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.০০০৭.২৩-২৩৬, তারিখ ২৪/০৮/২০২৩ পত্রে ৩টি প্রকল্প বড়ইচড়া ভেংড়ী, মজিবরের বাড়ি হইতে আজগরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৩,৫৮,০০০/= টাকা, বড়ইচড়া ভেংড়ী ঈদগাহ মাঠে মাটি ভরাট বরাদ্দ ৬ মেঃটন চাউল এবং বড়ইচড়া পাকা রাস্তা হইতে ময়ানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মান বরাদ্দ ৩লক্ষ টাকার কোনই কাজ হয়নি। রানীর হাট সিরাজগঞ্জ বাজার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংস্কার বরাদ্দকৃত ৬মেঃটন চাউলের কোন কাজ হয়নি। এদিকে বড়ইচড়া ভেংড়ী জামে মসজিদের অযু খানা নির্মান বাবদ ২,৫৮,৯৪০/= টাকা বরাদ্দ দিলেও ওই টাকার কোন কাজ করা হয়নি। বরং গ্রামের ফান্ড ও মুসল্লিদের দেয়া দানে ওই অযু খানার কাজ সম্পুর্ন করা হয়েছে। অথচ ওই প্রকল্প দেখিয়ে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ ব্যাপার ওই গ্রামের বাসিন্দা মোঃ ময়ান উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেছেন আপনাদের মসজিদের অযু খানার জন্য কিছু টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিন্ত এখন পর্যন্ত একটি টাকাও তিনি দেননি। গ্রামের ফান্ড ও সাধারণ মানুষের দান দক্ষিণায় মসজিদের অযু খানা নির্মান করা হয়।
(২০২৩-২০২৪) অর্থ বছরের গ্রামীণ অবকাঠামো মেরামত (টিআর-৩য় পর্যায়ে) সাধারণ কর্মসুচির আওতায় স্বারক ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.১১০.২৩.৩১- তারিখ ০৪/০৩/২০২৪ পত্রে দেওঘর কবরস্থান মেরামত বাবদ ২, ৬৫, ৪৭৩/= টাকা বরাদ্দ থাকলেও কোন কাজ করা হয়নি। আবার কাবিটা/কাবিখা ৩য় পর্যায় স্বারক ৫১.০১.৮৮৬১.০০০.৪১.১১০.২৩.৩০- তারিখ ০৪/০৩/২০২৪ পত্রে দুইটি প্রকল্প চকদেবীরামপুর কবরস্থানের রাস্তা নির্মান ও কবরস্থান সংস্কার কাজে ৫ মেঃ টন চাউল এবং নামাসিলট মালেকের বাড়ি হইতে নতুন পাড়া কবরস্থান পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার বাবদ ৩,৫৯,৭৫৭/= টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেখানেও কোন কাজ করা হয়নি।
এ ছাড়া তিনি (২০২২-২০২৩) অর্থ বছরে ৩০ লক্ষ টাকা, (২০২৩-২০২৪) অর্থ বছরে ১৫ লক্ষ টাকা এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ১০ লক্ষ ট্যাক্সের টাকা ইউপি সদস্যেদর বেতন না দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। তাছাড়াও চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক ইউনিয়নের ১৯৩৫ জন ভিজিএফ কার্ডধারীর মধ্যে ২০২৪ সালের রমজান মাসে ভিজিএফ দেন ১ হাজার ১০০ জনকে। বাকি কার্ডধারীদের ভূঁয়া মাস্টারোল দেখিয়ে আত্মাৎ করেছেন। এ ব্যাপারে তালম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল খালেক বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সত্য নয়। অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি তা চলমান রয়েছে যা তদন্ত করলে প্রমান মিলবে। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন যাই যে বাল ছিঁড়তে পারে ছিড়ুগ্গে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ ফরহাদ লতিফ বলেন, কোন প্রকল্পে অনিয়ম হলে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ জেলার ডিডিএলজি অফিসার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঝর্ণা আক্তার/ আজকের সিরাজগঞ্জ